॥ চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস ॥
শত বছর পেরিয়ে তুমি মহান,জন্ম তোমার ইতিহাসে আছে জ্বলজ্বলে রক্ত দিয়ে লেখা।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ অভিজাত এক বংশে শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু। বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন ‘খোকা’। টুঙ্গিপাড়ার একটি বনেদী পরিবারের নাম শেখ পরিবার। এই পরিবারের উত্তরসরী শেখ হামিদের একমাত্র পুত্র শেখ লুৎফর রহমান একজন সজ্জন ব্যক্তি।টুঙ্গিপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে তার রাজনীতির দীক্ষাগুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
আজ দেশ হবে মহীয়ান তুমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ বিশ্ব শিশু দিবস জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস। শিশুর ভবিষ্যৎ মানে একটি উন্নত দেশ সেই স্বপ্নই আমরা লালন করে বলে থাকি, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যদিও একটি বৈশ্বিক মহামারির জন্য ২বছর পর্যন্ত স্কুল বন্ধ ছিলো। আমাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলি। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের লেখা একটি গান জাতির জনক কে নিয়ে লেখা “একটি শিশু জন্মেছিলেন বাংলার মাটিতে বাংলা নিয়ে স্বপ্ন তাহার ছিল হৃদয়েতে
দেশের জন্য ছোট থেকে করেছেন লড়াই
ভালো কাজে থাকতেন তিনি করতেন না বড়াই।
বাংলা ভাষার জন্য তিনি নেমেছেন আন্দোলনে
ভাষার জন্য কি না করছেন জানেন সর্বজনে।
পাকিস্তানিকে তাড়ালেন তিনি মায়ের ভাষার জন্য,স্বাধীন একটি দেশ পেয়ে হয়েছি মোরা ধন্য।”জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একজন শিশু প্রেমী মানুষ ছিলেন। শিশুদের নিয়ে চিন্তা ছিল যে মানুষটির জন্মকে কেন্দ্র করে শিশু দিবস পালন করা হয় তার আদর্শ আমাকে শিক্ষা দেয়।তাই নিত্য নতুন কিছু সৃষ্টি করার চেষ্টা অনবরত। তাই শিশুদের নিয়ে একটু বেশি ভাবি। গোটা বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, অন্য সবার মতো শিশুরা ঘরবন্দী হয়ে পড়ে; যা ছিল তাদের মানসিক বিকাশের পথে বড় বাঁধা। পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি শিশুরা। আমাদের সমাজ ও পরিবারে মানসিক ও স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা নেই বললেই চলে। ফলে মহামারি–পরবর্তী শিশুদের মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে বের করে আনাই এখন খুব জরুরি। শিশুর ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া যে হিতে বিপরীত হতে পারে, সেটি আমরা দেখতে পাই আত্মহত্যার ঘটনায়। ফলে শিক্ষক, অভিভাবক সবাইকে শিশুর প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে শিশুবান্ধব নয়।পরীক্ষার চাপ থেকে তাদের রেহাই দেয়না কেহ।
মহামারিতে অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে গেছে। পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ধাক্কা সামাল দিতে শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে অনেকে। একইভাবে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে অনেক মেয়ে।
শিশুদের সংস্কৃতি চর্চার সাথে যুক্ত না রাখলে মানসিকভাবে শিশুদের অনেক ক্ষতি হবে।
আমি একজন ছবি প্রেমের মানুষ। দীর্ঘ বছর ধরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেকে নিয়োজিত রাখি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলি, ছবি আঁকার পাশাপাশি লেখালেখির সাধনা করি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার লেখা কিছু গান কবিতা আছে। গানগুলোতে সুর দিয়েছেন যে সব গুনী শিল্পীরা অসিত মন্ডল,আব্দুল হক,মধুসূদন হালদার,পরমা ঢালী,মনাশীষ বালা,শ্যামল ফৌজদার,বিষাণ চন্দ্র মন্ডল,লাবনী রহমান,সবুজ তরফদার,দ্বৈপায়ন বিশ্বাস, মহেশ্বর চন্দ্র বর্মন,তিথি মনি মন্ডল, শ্রীধাম মন্ডল, এস সাগর মিত্র,মহানন্দ গাইন,শিল্পী বালা,অঞ্জনা মন্ডল, স্বর্ণা মিস্ত্রী,সম্রাট মন্ডল,রফিকুল ইসলাম, পরমা মজুমদার, সেতু রানী।এই গুণী শিল্পীরা আমার লেখা গানে সুর দিয়ে আমাকে সাহিত্য জগতে অনুপ্রাণিত করে। এবং আমার লেখা কবিতা বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকে আবৃত্তি করে জীবন দিয়েছেন লেখাকে। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই আমি শিশুদের নিয়ে কাজ করি ২০০৩ সাল থেকে খুলনা আর্ট একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি।।তাই শিশুদের সম্পর্কে আমার বেশকিছু অভিজ্ঞতা থেকে উপরোক্ত কথাগুলো তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। ফলে উন্নত একটি বিশ্ব গড়তে চাইলে উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পরিবেশ সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিশু দিবসে শিশুর অধিকার রক্ষা নিয়ে আমরা আলোচনা করি। গণমাধ্যমেও নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতেই আমাদের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র শিশুবান্ধব হয়ে উঠবে।জাতির পিতাকে পঞ্চান্ন বছর বয়সে হায়নারা গভীর রাতে মেরেছিল।আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন তবে আজ তাঁর বয়স হতো ১০২বছর। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে আমরা মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস বাঁচতে দিয়েছি। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে শতায়ু তিনি হতেন না, তা কে বলতে পারে! যদি তিনি তাঁর অতি প্রিয় বাংলার মাটিতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতেন তবে এই দিনটি জাতি তখন কীভাবে পালন করত, তা ভাবলে মনেপ্রাণে শিহরণ জাগে। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের কথা নিয়েই যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আত্মনিয়োজিত ছিলেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
শেখ মুজিবুর রহমান ছোটদেরকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তাঁর প্রিয় সংগঠন। কৈশোরে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ দিনটি তিনি কাটিয়েছেন এই সংগঠনের ভাই-বোনদের মাঝে। তাঁর জন্মদিনটিকে এখন আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করি। শিশুদের কাছে দিনটি আনন্দের।
এসব যার সুনিপুণ হাত ধরে বাস্তবায়িত হচ্ছে তিনি আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।১৯৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকলেও তার নির্দেশে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে বাঙালিরা।তার পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এক দল সেনা কর্মকর্তার হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য রাজপথে নামে কারাগারে যার জীবন কেটেছে, সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অবসান ঘটে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কের এবং তা বাঙালিদেরই হাতে।এ বছর শিশু দিবস পালন হবে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস রচিত নাটক,গান কবিতা দিয়ে।অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন খুলনা আর্ট একাডেমির চারুকলা ভর্তি কোচিং এর ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।আপনারা সবাই তাদের শুভ কামনা করবেন। অনুষ্ঠানটি যেন নবীনরা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।
(চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, খুলনা আর্ট একাডেমি।)