আরশীনগর প্রতিবেদক : যে সময়ে মানুষ ছিলো নিরক্ষর, সমাজ ছিলো কুসংস্কার আর
জাতি ভেদাভেদে চরম বিভক্ত সেই সমাজে ফকির লালন সাঁইয়ের বাণী মানুষকে
উজ্জ্বীবিত করেছে। সাঁইজির মানবতার গানে তৎকালীন অন্ধ সমাজের মানুষেরা
আলোর সন্ধান পেয়েছিলো। গতকাল কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে
দৌলপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে ৩ দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক
উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন
একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামী, জাত পাত, উঁচু নিচুর চরম
ভেদাভেদের সময় লালন সাঁইয়ের গান মানবমুক্তির পথ দেখিয়েছে। নারী শিক্ষা
যখন নিষিদ্ধ, নারী স্বাধীনতা যখন উপেক্ষিত ঠিক সে সময় নারী সমাজকে সাথে
নিয়ে অসাম্প্রদায়িকতা এবং নারীদের জয়গান গেয়েছেন বাউল সম্রাট ফকির লালন
সাঁই।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের এই
আধ্যাত্বিক বাণীর শ্লোগানে সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঐতিহাসিক উৎসবের
উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ইসমাইল হোসেন (এনডিসি)। তবে এর আগেই
আধ্যাত্বিক গুরু ফকির লালনকে স্মরণ ও তার দর্শন পাওয়াসহ অচেনাকে চেনা,
জ্ঞাণ সঞ্চয়, আত্মার শুদ্ধি ও মুক্তির লক্ষ্যে আখড়াবাড়িতে ভীড় জমিয়েছে
লালনভক্ত ও অনুসারী ছাড়াও দর্শনার্থীরা। করোনা মহামারিতে সরকারি
নিষেধাজ্ঞার কারণে টানা দুই বছরে লালন স্মরণোৎসব ও লালন তিরোধান দিবসের
৪টি অনুষ্ঠানে আসতে না পারায় এবারের দোল উৎসবকে ঘিরে বাড়তি উন্মাদনা
লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে একতারা, দোতারা আর ঢোল বাঁশির সুরে ও আধ্যাত্মিক গানে বিমোহীত হয়ে
উঠে লালন আখড়াবাড়ি। দীর্ঘদিন পরে লালনের আখড়াবাড়ি ফিরেছে তার স্বরুপে।
আখড়াবাড়ি চত্বরে কালী গাঙের পাড়ে বিশাল মাঠে বসেছে লালন মেলা। ঐতিহাসিক
এই উৎসবকে নির্বিঘœ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কয়েকস্তরের কঠোর
নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থা। প্রতি বছরের মত এবারও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ৩ দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে
লালন একাডেমি যা শেষ হবে আগামী ১৭ মার্চ রাতে।
উল্লেখ্য, বাউলদের খাঁটি করে গড়ে তুলতে বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁই তাঁর
জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই নিজ আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দোলপূর্ণিমা
রাতে বাউলদের নিয়ে সাধু সঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক
তার মৃত্যুর পরও এ উৎসব চালিয়ে আসছে তার ভক্ত ও অনুসারীরা।